কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৫ স্থানে বাইপাস সড়ক হবে

বিশেষ প্রতিবেদক •

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যানজটমুক্ত ও বাধাহীন যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সড়কের পাঁচটি স্থানে বাইপাস সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এলাকাগুলো হলো, পটিয়া, চন্দনাইশের দোহাজারি, সাতকানিয়ার কেরানীহাট, লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ও চকরিয়া। এরমধ্যে কেরানীহাট এলাকায় বাইপাসের পরিবর্তে ফ্লাইওভার নির্মাণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে বাইপাস সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে বিস্তারিত জরিপের (ডিটেইল সার্ভে) কাজ চলছে।
কক্সবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তাফা বলেন, পর্যটন এলাকা কক্সবাজার, মহেশখালীর মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন করতে এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রতিটি বাইপাসের প্রশস্ত ৩’শ ফুট হবে।

যেসব স্থানে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে তা হলো-পটিয়া বাইপাস সড়ক বর্ধিতকরণ, চন্দনাইশের দোহাজারী, সাতকানিয়ার কেরানীহাট, লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ও চকরিয়া বাইপাস সড়ক। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ে ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের আওতায় এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে সাতকানিয়ার কেরানীহাট এলাকায় বাইপাস সড়ক নির্মাণ করতে জাইকা আগ্রহী হলেও সেখানে ফ্লাইওভার নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছে সড়ক বিভাগ। সেখানে ফ্লাইওভার নির্মাণের সম্ভাবনা রয়েছে।

সড়ক বিভাগ সুত্রে জানা যায়, চকরিয়া সরকারি কলেজ থেকে সড়কের পূর্বপাশে ৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নির্মিত হবে বাইপাস সড়ক। এতে যানজটের কবল থেকে নিস্তার পাবে চকরিয়া পৌরবাসি। নতুন বাইপাস সড়ক নির্মাণের ফলে চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর, কাকারা ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের অন্তত ১৫৬ একর জমি অধিগ্রহণের আওতায় আসছে। জমির মালিককে ক্ষতিপূরণের বিপরীতে জমি ও স্থাপনার টাকা বিতরণ করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

পটিয়ার ইন্দ্রপুল এলাকা থেকে কমলমুন্সির হাট পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক ইতিমধ্যে ৩৮ দশমিক ২২ একর জমি নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর পটিয়া বাইপাস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়কটিতে ইতিমধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। নতুন করে আরো ১১৪ দশমিক জমি অধিগ্রহণ করে বাইপাসটি ৩’শ ফুট প্রশস্ত করা হবে। চন্দনাইশের দেওয়ানহাট থেকে দোহাজারী রাজমহল কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত সড়কের পশ্চিম পাশে ৪ দশমিক ৭০ কিলোমিটার দোহাজারি বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হবে।

সড়ক নির্মাণে ১০৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সড়ক বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের পাঁচটি যানজটযুক্ত এলাকা চিহ্নিত করে এসব প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এসব স্থানে অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগেই থাকে। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে এসব বাইপাস নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে এ সড়কে যানজটমুক্ত যান চলাচল করতে পারবে।
প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের আঞ্চলিক যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্ন করতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে সেতু প্রতিস্থাপন, ইন্টারসেকশন, বাজার, লেভেল ক্রসিং, রিজিড পেভমেন্ট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।

ইতোমধ্যে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কের চকরিয়া মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা সেতু, চন্দনাইশ গাছবাড়িয়া বরগুনী খাল ব্রিজ, পটিয়া ইন্দ্রপুল ব্রিজ, দোহাজারী শঙ্খ নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। চারটি সেতু নির্মাণে খরচ পড়ছে ৭’শ কোটি টাকা। জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ক্রস বর্ডার নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (সিবিআরএনআইপি) প্যাকেজ সি-এর আওতায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চারটি পয়েন্টে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে।